কোয়ান্টাম টানেলিং । Quantum tanling

Cyral Carbon
0

 

কোয়ান্টাম টানেলিং



কোয়ান্টাম টানেলিং কোয়ান্টাম মেকানিকসের অনেকগুলো অদ্ভুত ঘটনার মধ্যে অন্যতম। আধুনিক বিশ্বে এটা ছাড়া ইলেকট্রনিকস যেন কল্পনাই করা যায় না। তাই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনো বলকে যদি কোনো দেয়ালের দিকে ছুড়ে মারা হয় তাহলে সাধারণভাবে আমরা দেখব যে বলটা দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে আবার ফিরে এসেছে। অর্থাৎ বলটার মাঝে দেয়াল ভেদ করার মতো শক্তি নেই বলে এটা ফিরে আসে। কিন্তু একই ব্যাপার যদি ইলেকট্রন দিয়ে করা হয়, তবে ব্যাপারটা অন্য রকম হবে। ইলেকট্রনের দেয়াল ভেদ করার মতো যথেষ্ট শক্তি না থাকলেও কোয়ান্টাম মেকানিকস বলে যে তার দেয়াল ভেদ করার সামান্য হলেও একটা সম্ভাবনা থাকে। ফলে অনেকগুলো ইলেকট্রন দেয়ালের দিকে পাঠালে কিছু ইলেকট্রন দেয়াল ভেদ করে অন্য পাশে চলে যাবে। এটাই সহজ কথায় কোয়ান্টাম টানেলিং।



ইতিহাস : 


তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে প্রথম কোয়ান্টাম টানেলিং এর ধারণা পাওয়া যায়। তেজস্ক্রিয়তা ১৮৯৬ সালে হেনরি বেকেরেল এর দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছিল।  মারি ক্যুরি ও পিয়ের ক্যুরি তেজস্ক্রিয়তাকে নিয়ে আরও বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন এবং এর জন্য তারা ১৯০৩ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান। আরনেস্ট রাদারফোর্ড এবং এগন শোয়েইডলার এর প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা করেন, পরবর্তীতে ফ্রেডরিক কোলরাশ যার সত্যতাকে পরীক্ষার সাহায্যে প্রতিপাদিত করেন। অর্ধায়ু এবং ক্ষয় এর ভবিষ্যদ্বাণী এর ধারণা তার কাজ থেকেই পাওয়া যায়।



১৯০১ সালে রবার্ট ফ্রান্সিস এয়ারহার্ট, মাইকেলসন ইন্টারফেরোমিটার ব্যবহার করে অল্পদূরত্বে থাকা ইলেকট্রোডসমূহের মধ্যবর্তী গ্যাস এর তরিৎ পরিবাহিতা নিয়ে গবেষণা করার সময় একটি পরিবাহিতার একটি অপ্রত্যাশিত জগৎ আবিষ্কার করেন। জে. জে. থমসন মন্তব্য করেন, এটা নিয়ে আরও গবেষণার দরকার। এরপর ১৯১৪ সালে স্নাতক ছাত্র ফ্রাঞ্জ রোথার একটি সংবেদী প্লাটফর্ম গ্যালভানোমিটার দিয়ে এয়ারহার্ট এর পদ্ধটিটি ইলেকট্রোড সেপারেশন নিয়ন্ত্রণ ও পরিমাপ করার জন্য ব্যবহার করেন, এবং তার সাহায্যে সরাসরি স্থিরক্ষেত্র নির্গমন বিদ্যুৎ পরিমাপ করেন। ১৯২৬ সালে রোথার, 26 pA সংবেদনশীলতার একটি নতুন প্লাটফর্ম গ্যালভানোমিটার ব্যবহার করে একটি "শক্ত" শূন্যস্থানে কাছাকাছি দূরত্বের ইলেক্ট্রোডের মধ্যে ক্ষেত্র নির্গমন বিদ্যুৎ এর পরিমাপ করেন।



ফ্রেডরিক হুন্ড প্রথম ১৯২৭ সালে কোয়ান্টাম টানেলিং লক্ষ্য করেন, যখন তিনি দ্বি-কূপ বিভব এর ভিত্তি দশা গণনা করছিলেন। এবং স্বাধীনভাবে একই বছরে লিওনিড ম্যান্ডেলস্টাম এবং মিখাইল লিওনটোভিচ একটি সীমিত স্থানের আবদ্ধ বিভবে একটি কণার গতির জন্য সেইসময় নতুন আবিষ্কৃত শ্রোডিঙ্গারের তরঙ্গ সমীকরণের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করতে গিয়ে কোয়ান্টাম টানেলিং আবিষ্কার করেন। এর প্রথম প্রয়োগ ছিল আলফা ক্ষয় এর একটি গাণিতিক ব্যাখ্যা, যা ১৯২৮ সালে জর্জ গ্যামোর কাজ ছিল। তিনি মান্ডেলস্টাম এবং লিওন্টোভিচ এর আবিষ্কার সম্পর্কে জানতেন। আবার স্বাধীনভাবে রোনাল্ড গারনি এবং এডওয়ারড কনডনও এই প্রয়োগটি আবিষ্কার করেন। এই দুই গবেষক একইসাথে একটি আদর্শ নিউক্লীয় বিভব এর জন্য শ্রোডিঙ্গারের সমীকরণের সমাধান করেন এবং কণার অর্ধায়ু এবং নির্গমনের শক্তির মধ্যে সম্পর্ক প্রতিপাদন করেন যা প্রত্যক্ষভাবে টানেলিং এর গাণিতিক বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভরশীল।


গ্যামো এর একটি আলোচনাসভায় উপস্থিত হবার পর ম্যাক্স বর্ন টানেলিং এর সাধরনতাকে বুঝতে পারেন। তিনি অনুধাবন করেন যে এটি কেবল নিউক্লীয় পদার্থবিদ্যাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি কোয়ান্টাম বলবিদ্যার একটি সাধারণ ফলাফল যা বিভিন্ন ব্যবস্থাতেই প্রয়োগযোগ্য।এর খুব কম সময়ের মধ্যেই কেন্দ্রীণে কণার টানেলিং এর পরিস্থিতি নিয়ে বিবেচনা করা হয়। অর্ধপরিবাহী নিয়ে গবেষণা এবং ট্রানজিস্টর ও ডায়োড এর আবিষ্কারের ফলে ১৯৫৭ সালে ইলেকট্রনের টানেলিং স্বীকৃত হয়। লিও এসাকি, ইভার ইয়্যাভার এবং ব্রায়ান জোসেফসন অতিপরিবাহী কুপার যুগলের টানেলিং এর ভবিষ্যদ্বাণী করেন, যার জন্য তারা ১৯৭৩ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান। ২০১৬ সালে জলের কোয়ান্টাম টানেলিং আবিষ্কৃত হয়।

0
0
Tags

Post a Comment

0 Comments
Post a Comment (0)