তাপগতীয় সিস্টেম (Thermodynamical system)

Cyral Carbon
0


 তাপগতীয় সিস্টেম

 পদার্থের যে নির্দিষ্ট অংশকে আলাদা করে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয় তাকে সিস্টেম বলে।
 সিস্টেম বাদে এর চারপাশে যা কিছু আছে এবং সিস্টেমের ওপর তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব আছে তাদের সবকিছুই ওই সিস্টেমের পরিবেশ হিসেবে বিবেচিত হবে। একটি সিলিন্ডার পিস্টন  দ্বারা আবদ্ধ কিছু গ্যাসকে সিস্টেম হিসেবে বিবেচনা করা যায়, এক্ষেত্রে এর চারপাশের বায়ু এমনকি সিলিন্ডার ও পিস্টনও পরিবেশে বিবেচিত হবে।
 যে সিস্টেম তার পরিবেশের সাথে ভর শক্তি বিনিময় করতে পারে তাকে উন্মুক্ত সিস্টেম বলে। এবং যে সিস্টেম পরিবেশের সাথে শুধু শক্তি বিনিময় করতে পারে তাকে বদ্ধ সিস্টেম বলে আর যে সিস্টেম পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয় না অর্থাৎ পরিবেশের সাথে ভর শক্তি কিছুর বিনিময় করে না তাকে বিচ্ছিন্ন সিস্টেম বলে।
 তাপ গতিবিদ্যায় সিস্টেমের পরিমাপযোগ্য কয়েকটি ভৌত ধর্মের সাহায্যে এই অবস্থার বর্ণনা করা যায়। এ ধর্মগুলোকে তাপগতীয় চলরাশি বা তাপগতীয় স্থানাঙ্ক বলে।গ্যাসীয় সিস্টেমের ক্ষেত্রে তাপগতীয় চলরাশি হচ্ছে আয়তন(v) এবং তাপমাত্রার(t) কারণে গুলো জানা থাকলে গ্যাসের ভৌত অবস্থা জানা যায় স্থানাঙ্কের সাহায্যে সিস্টেমের অবস্থার বর্ণনা দেওয়া যায় তাদেরকে তাপগতীয় সিস্টেম বলে।

 তাপ

 কোন সিস্টেমকে চুল্লির ওপর অথবা হিমায়কের অভ্যন্তরে রাখা হলে তার তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটে কোন প্রকার বাধা না পেলে এর চাপ এবং আয়তন পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ সিস্টেমের অবস্থার পরিবর্তন হয়। চুল্লি বা হিমায়কের  সাহায্যে কিছু একটা সিস্টেমের মধ্যে প্রবেশ করেছে যা সিস্টেম হতে নির্গত হয়েছে যার ফলে এ পরিবর্তন হয়েছে। এ কিছু একটা হচ্ছে তাপ। অর্থাৎ যা সিস্টেমের মধ্যে প্রবেশ করলে বা সিস্টেম হতে নির্গত হলে তাপগতীয় চলরাশির পরিবর্তন ঘটে তাই তাপ।
 ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ পর্যন্ত ধারণা করা হতো তাপ ক্যালোরিক নামক এক প্রকার প্রবাহি। কোন সিস্টেমে ক্যালোরিক প্রবেশ করলে সিস্টেমের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং সিস্টেম হতে নির্গত হলে তাপমাত্রা হ্রাস পায়। সবক্ষেত্রে উষ্ণতর সিস্টেম হতে ক্যালরিক শীতলতর বস্তু দিকে প্রবাহিত হয়। এই মতবাদ অনুসারে একটি সিস্টেম ক্যালোরিক হারিয়ে ঠান্ডা হয় এবং অপর সিস্টেম গ্রহণ করে গরম হয়।

কাজ 

 বলের অভিমুখে বা বলের বিরুদ্ধে কোন বস্তুর সরণ হলে বস্তুর উপর কাজ হয়েছে বা বস্তু কর্তৃক কাজ সাধিত হয়েছে বলা হবে।

 অভ্যন্তরীণ শক্তি বা অন্তঃস্থ শক্তি

 শক্তির বিনিময় কাজ সাধিত হয় অন্য কথায় বলা যায় কাজ করতে  সব সময় শক্তির প্রয়োজন। ইঞ্জিনে তাপশক্তির বিনিময় যান্ত্রিক কাজ সাধিত হয়, বৈদ্যুতিক মোটর তড়িৎ শক্তির বিনিময়ে কাজ করে, চুম্বক শক্তি আলোক শক্তি ও শব্দ শক্তির বিনিময়ে অনেক কাজের উদাহরণ দেয়া যায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই কাজ করতে শক্তি ব্যয় হয়।
 কোন বস্তু বা সিস্টেমের সামগ্রিকভাবে যে গতিশক্তি ও বিভব শক্তি থাকে তাকে ঐ বস্তুর বা সিস্টেমের বহিঃস্থ শক্তি বলা হয়। ঘড়ির স্প্রিংয়ের বিভব শক্তির বিনিময় ঘড়ির কাঁটা ঘুরে, গতিশীল পানির গতি শক্তির বিনিময়ের ডায়নামো চালায়, নৌকার পালে বাতাস লাগলে নৌকা চলে। বায়ুর গতি শক্তি এই কাজ করেছে এগুলো বহিঃশক্তির বিনিময়ে কাজের উদাহরন। 
 অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, কোন বিচ্ছিন্ন সিস্টেম সম্পূর্ণ কাজ নিজ হাতে কাজ করছে এ সময় সিস্টেম বিচ্ছিন্ন থাকায় বাইরে থেকে কোন প্রকার শক্তি যোগানো সম্ভব হয়নি উদাহরণস্বরূপ :-
একটি সিলিন্ডার এর মধ্যে আবদ্ধ গ্যাসের কথা ধরা যাক, আবদ্ধ গ্যাস প্রসারিত হবে সিস্টেমের গতিশক্তি ও বিভব শক্তির কোনো পরিবর্তন হয়নি  কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? বিভবশক্তি ও গতিশক্তি তথা বহিঃশক্তির ব্যতীত সিস্টেমের আরো একটি অংশ থাকলে ঘটনাটির ব্যাখ্যা দেয়া যায় শক্তি অংশকে সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ শক্তি বলা হবে।
 পিস্টনের সরনে সিস্টেমের বহিঃস্থ শক্তি অপরিবর্তিত থাকলেও এর অভ্যন্তরীণ শক্তি হ্রাস পেয়েছে অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ শক্তির বিনিময়ে কাজ সম্পন্ন হয়েছে এখন প্রশ্ন হচ্ছে এ অভ্যন্তরীণ শক্তির উৎস কি?
 আণবিক গতিতত্ত্ব সাহায্যে এর একটি ব্যাখ্যা দেওয়া যায়, প্রতিটি সিস্টেমই অসংখ্য   অনু-পরমান সমন্বয়ে গঠিত। আণবিক গতিতত্ত্ব অনুসারে, আনবিক গতিতত্ত্ব অনুসারে অণুগুলো সবসময় কম্পমান গতিশীল এবং এদের পরস্পরের মধ্যে আকর্ষণজনিত বল ক্রিয়া করে। সুতরাং অনুগুলির গতিশক্তি ও বিভব শক্তি গতি শক্তির অণুবীক্ষণিক। একটি অভ্যন্তরীণ শক্তি আদর্শ গ্যাসের ক্ষেত্রে অনুগুলির মধ্যে আকর্ষণ বল থাকে না, তাই সেক্ষেত্রে সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ শক্তি অনুগুলোর মোট শক্তির সমান।
গ্যাসের গতিতত্ত্ব থেকে আমরা জানি,

PV=2/3E

E=3/2PV

এখানে E হচ্ছে সিস্টেমের অনুগুলোর মোট গতিশক্তি। সুতরাং সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ শক্তি -

U=E=3/2PV

আদর্শ গ্যাসের সূএানুযায়ী PV=nRT. তাই

U=3/2nRT

 নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাসের জন্য 3nR/2  ধ্রুব।

 সুতরাং গ্যাসের অভ্যন্তরীণ শক্তির তাপমাত্রার সমানুপাতিক অর্থাৎ অভ্যন্তরীণ শক্তি শুধু গ্যাসের তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে চাপ ও আয়তনের উপর নির্ভর করে না।

 কিন্তু তাপ গতিবিদ্যায় অভ্যন্তরীণ শক্তি প্রসঙ্গে অণুগুলোর অস্তিত্ব এবং এদের সম্ভাব্য গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে কোন প্রকার উল্লেখ করা হয় না। এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ শক্তি চাক্ষুষ সিস্টেমের একটি ধর্ম মাত্র। কোন সিস্টেমে তাপ প্রয়োগ করা হলে এর অনুগুলির গতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এর ফলে অভ্যন্তরীণ শক্তি বৃদ্ধি ঘটে আমরা কখনো বলবো না যে এটা তাপ শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে কোন সিস্টেমের অভ্যন্তরীণ শক্তির মান এর অবস্থার উপর নির্ভর করে কোন সিস্টেম এর অভ্যন্তরীণ শক্তি পরম মান জানা সম্ভব নয়। আমরা শুধু এর পরিবর্তনটা পরিমাপ করতে পারি।

 তাপগতীয় স্থানাঙ্কের পরিবর্তন হওয়ার অর্থ হচ্ছে সিস্টেমের অবস্থার পরিবর্তন হওয়া সিস্টেমের অবস্থার পরিবর্তন বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় হতে পারে এ প্রক্রিয়া গুলোকে তাপগতীয় প্রক্রিয়া বলে।

সূচক চিত্র 

 তাপগতীয় চলরাশি সমূহকে বিভিন্ন অক্ষের সাথে সূচিত  করলে কোন সিস্টেম এর অবস্থান স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায় একটি বিন্দু নির্দেশ করবে। একে তাপগতীয় স্থানাঙ্ক  বলে। আমরা আরো জানি, তাপগতীয় চলরাশি সমূহ পরষ্পর সম্পর্কযুক্ত। ধরা যাক, তাপগতীয়  দুটি চলরাশি P ও V এবং P=f(V)  ।  তাপগতীয় পরিবর্তনকে তাপগতীয় স্থানাংক ব্যবস্থা একটি রেখার সাহায্যে নির্দেশ করা যাবে। তাপগতীয় প্রক্রিয়াকে রেখার সাহায্যে প্রকাশ করাকে সুচিত্র বলে এবং রেখাটিকে তাপগতীয় প্রক্রিয়া পথ বলে।

সমচাপ প্রক্রিয়া 


 সিলিন্ডারের মধ্যে পিস্টন দ্বারা আবদ্ধ গ্যাসের তাপ প্রয়োগ করলে যদি পৃষ্ঠের উপর বাহ্যিক চাপের পরিবর্তন না হয় তবে গ্যাসের তাপমাত্রা ও আয়তন বৃদ্ধি পায় কিন্তু চাপ অপরিবর্তিত থাকে। এরূপ পরিবর্তনকে সমচাপ প্রক্রিয়া বলে। অর্থাৎ যে প্রক্রিয়ায় কোন সিস্টেম এর তাপমাত্রা সাথে আয়তনের পরিবর্তন হয় কিন্তু চাপ স্থির থাকে তাকে সমচাপ প্রক্রিয়া বলে।

সমআয়তন  প্রক্রিয়া 

 কোন গ্যাসকে পাত্রে আবদ্ধ করে তাপ প্রয়োগ করলে এর তাপমাত্রা ও চাপ বৃদ্ধি পায় কিন্তু আয়তন পরিবর্তিত হতে পারে না। একে সম আয়তন প্রক্রিয়া বলে। অর্থাৎ, যে প্রক্রিয়ায় কোন সিস্টেমের তাপমাত্রার সাথে চাপের পরিবর্তন হয় কিন্তু আয়তন স্থির থাকে তাকে সমআয়তন প্রক্রিয়া বলে। সমআয়তন  প্রক্রিয়ায় কোনো পরিবর্তন হয় না তাই কৃতকাজ শূন্য।


 সমোষ্ণ প্রক্রিয়া

 কোন গ্যাসকে বলপ্রয়োগ করে সংকুচিত করা যায় বল প্রয়োগে গ্যাসকে সংকুচিত করতে কিছু শক্তি ব্যয় হয় ফলে গ্যাসের অন্তঃস্থ শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং তাপমাত্রা বেড়ে যায় আবার গ্যাস প্রসারিত করা হলে গ্যাস কিছু কাজ করে ফলে এর অন্তঃস্থ শক্তি হ্রাস পায় এবং তাপমাত্রা কমে যায় পাএের দেয়াল তাপ সুপরিবাহী এবং গ্যাসের সংকোচন-প্রসারণ ধীরে ধীরে সংঘটিত হলে গ্যাস পরিবেশকে তাপ দেয় অথবা পরিবেশ হতে তাপ গ্রহণ করে। ফলে তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকে এতে গ্যাসের চাপ ও আয়তন অপরিবর্তিত হয় তাপগতীয় প্রক্রিয়াকে সমোষ্ণ প্রক্রিয়া বলে। অর্থাৎ যে প্রক্রিয়ায় কোন সিস্টেম এর চাপ ও আয়তন পরিবর্তন হয় কিন্তু তাপমাত্রায় স্থির থাকে তাকে সমোষ্ণ প্রক্রিয়া বলে। সমোষ্ণ প্রক্রিয়া চাপের সাথে আয়তনের পরিবর্তন কিরূপ হয় তা সূচক চিত্রের সাহায্যে দেখানো হয়েছে 
এটির প্রক্রিয়ার ফলে পরিবেশের সাথে তাপের আদান-প্রদানের যথেষ্ট সুযোগ থাকে সমস্ত প্রক্রিয়া বয়েলের সূত্র মেনে চলে।

 রুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়া

 পাএের  দেয়াল তাপ অপরিবাহী হলে সংকোচন-প্রসারণের সময় গ্যাস পরিবেশকে   তাপ দিতে বা পরিবেশ থেকে তাপ গ্রহণ করতে পারে না। ফলে তাপমাত্রার পরিবর্তন হয় এই প্রক্রিয়াকে রুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়া বলে। অর্থাৎ যে প্রক্রিয়ায় কোন সিস্টেমের চাপ, আয়তন ও তাপমাত্রার পরিবর্তন হয় কিন্তু পরিবেশের সাথে তাপের আদান-প্রদান হয় না তাকে রুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়া বলে। এ প্রক্রিয়ায় চাপের সাথে আয়তন এর চিত্র দেখানো হয়েছে। রুদ্ধতাপীয়  রেখা সমোষ্ণ রেখা অপেক্ষা অধিকতর খাড়া।  পাত্রের দেয়ালকে আমরা তাপ অপরিবাহী বলেছি কিন্তু বাস্তবে এমন কোন পদার্থ নেই যার মধ্য দিয়ে মোটেও তাপ চলাচল করতে পারে না। তাই রুদ্ধতাপীয় প্রক্রিয়া জন্য পাথরের দেয়াল যথাসম্ভব তাপ কুপরিবাহী পদার্থের তৈরি হতে হবে এবং সংকোচন-প্রসারণ দ্রুত ঘটানো হবে। যেন পরিবেশের সাথে তাপের আদান-প্রদানের সুযোগ না পায় তাই বলা হয় তবে দ্রুত প্রক্রিয়া।
0
0

Post a Comment

0 Comments
Post a Comment (0)