কঙ্কালতন্ত্রের শ্রেণীবিন্যাস (Classification of skeletal system)

Cyral Carbon
0
মানবদেহের কঙ্কালতন্ত্র তিন ভাগে বিভক্ত:

1. বহিঃকঙ্কালতন্ত্র : 
দেহের বাইরে থেকে এদের দেখা যায়। এরা ত্বকের এপিডার্মিস থেকে উদ্ভূত।  এজন্য এদেরকে ত্বকোদ্ভুদ অঙ্গাদি বলে। নখ, দাঁত, লোম প্রভৃতি এ তন্ত্রের অন্তর্গত।

2.  বহিঃকঙ্কালতন্ত্র:  
কঙ্কাল বলতে আমরা সাধারণত অন্তঃকঙ্কালকেই বুঝি। এটি অস্থি , তরুণস্থি এবং লিগামেন্ট এর সমন্বয়ে গঠিত।দেহের বাইরে থেকে দেখা যায় না। এটি দুটি প্রধানত ভাগে বিভক্তঃ

 ১. অক্ষীয় কঙ্কাল ও 
২.উপাঙ্গীয় কঙ্কাল

৩. স্প্লাংকনিক কঙ্কালতন্ত্র:
 এটিই অন্তঃকঙ্কাল তন্ত্রের অংশ হিসেবে পরিচিত হলেও আলাদাভাবে এ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ল্যারিংক্সএর তরুনাস্থি, ট্রাকিয়া, ব্রংকাই প্রভৃতি এ বিভাগের অন্তর্গত।

 কঙ্কালতন্ত্রের কাজ

 ক. যান্ত্রিক কাজ:

১. দৈহিক কাঠামো গঠন :
কঙ্কালতন্ত্র মানব দেহের গঠন ও নির্দিষ্ট আকৃতি প্রদান করে।

২. সুরক্ষা:
 মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গদি যেমন-মস্তিষ্ক, ফুসফুস, হূৎপিণ্ড, সুষুম্নাকান্ড প্রভৃতি বিশেষভাবে নির্মিত কঙ্কালে সুরক্ষিত থাকে।

৩. সংযোগস্থল সৃষ্টি:
দেহের অধিকাংশ পেশী, লিগামেন্ট ও টেন্ডন কঙ্কালে সংযুক্ত থেকে বিভিন্ন অঙ্গের সঞ্চালন ঘটায়।

৪.চলন :
অস্থিসন্ধি গঠন এবং পেশী সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে কঙ্কালতন্ত্র মানুষের চলনে প্রধান ভূমিকা রাখে।

৫.ভারবহন :
 পেশী সমূহ কঙ্কালের সাথে আটকে থেকে দেহের ভার বহন করে।

খ. শরীর বৃত্তীয় কাজ 

৬. রক্ত কণিকা উৎপাদন :
  পরিণত মানব দেহের রক্ত উৎপাদনকারী প্রধান টিস্যু হচ্ছে লাল অস্থিমজ্জা । স্টার্নাম, পাজর,কেশুরেকা, করোটি এবং  ফিমার ও হিউমেরাসের মস্তকে অবস্থিত অস্থি মজ্জা থেকে লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন হয়।  অস্থিমজ্জা থেকে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় 26 লক্ষ লোহিত রক্তকণিকা সৃষ্টি হয়। অবিরামভাবে লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন ছাড়াও লাল অস্থিমজ্জা অনুচক্রিকা উৎপাদন করে এবং ম্যাক্রোফেজ ধারন করে।

৭.শ্বাস-প্রশ্বাস শ্রবন:
 বক্ষপিঞ্জর শ্বাস-প্রশ্বাসে এবং  মধ্যকর্ণের কর্নাস্থিত শ্রবণে সহায়তা করে।

৮.রোগ প্রতিরোধ :
 অস্থির রেটিকুলো এন্ডোথেলিয়াল তন্ত্র দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাতায় অংশ নেয়।

৯.খনিজ লবণ সঞ্চয় :
 ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম সঞ্চয় করে এবং প্রয়োজনে রক্তে সরবরাহ করে।

১০.চাপ ও আয়নিক সমতা রক্ষা :
 দেহের অভ্যন্তরীণ চাপ নিয়ন্ত্রণে ও আয়নিক সমতা রক্ষায় অস্থিসমূহ কাজ করে।

১১.হরমোনাল নিয়ন্ত্রণ :
 অস্থির কোষ থেকে অস্টিওক্যালসিন নামক হরমোন খরিত হয় যা দেহের রক্তের চিনি ও চর্বির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।

১২.রাসায়নিক শক্তি :
 মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে কিছু লোহিত অস্থি মজ্জা পরিবর্তিত হয়ে পিত অস্থি-মজ্জা গঠন করে। পিত অস্থিমজ্জায় প্রচুর পরিমাণে অ্যাডিপোজ কোষ থাকে যেগুলো দেহের সঞ্চিত রাসায়নিক শক্তির আধার হিসেবে ভূমিকা রাখে।

 কঙ্কাল তন্ত্রের উপাদান :

কঙ্কালতন্ত্র 5 ধরনের তন্তুময় ও খনিজ সমৃদ্ধ প্রধান উপাদান নিয়ে গঠিত।

১.অস্থি : অস্থি কঙ্কালতন্ত্রের উপস্থিত সুদৃঢ় যোজক টিস্যু যা প্রধানত ক্যালসিয়াম লবণ দিয়ে গঠিত।

২. কোমলাস্থি বা তরুণাস্থি:
 কোমলাস্থি কঙ্কালতন্ত্র উপস্থিত স্থিতিস্থাপক ধরনের যোজক টিস্যু। তবে এতে সাধারণত কোন ক্যালসিয়াম থাকে না।

৩.লিগামেন্ট :
লিগামেন্ট বা অস্থি বন্ধনী হচ্ছে শ্বেত বর্ণের তন্তুময়  ও স্থিতিস্থাপক বন্ধনী যা দিয়ে একটি অস্থির অন্য একটি অস্থির সাথে যুক্ত থাকে এগুলো বিভিন্ন অঙ্গ কে সঠিক স্থানে ধরে রাখতে সহায়তা করে।

৪.  টেনডেন:
 টেনডন হলো ঘন ও মজবুত শ্বেতবর্ণের নমনীয় অস্থিতিস্থাপক তন্তুময় যোজক টিস্যু যেগুলো মাংসপেশির প্রান্তে অবস্থান করে ও অস্থির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। 

৫.অস্থিসন্ধি :
 একটি অস্থির অন্য একটি অস্থির সাথে সংযুক্ত হয়ে সন্ধি গঠন করে তাকে অস্থিসন্ধি বলে।অস্থিসন্ধি থাকার কারণে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ কে বিভিন্ন মাত্রায় সঞ্চালন করা যায় ফলে চলন ভার বহন ও বিভিন্ন কাজকর্ম সহজ হয়।
কঙ্কালতন্ত্রের প্রধান ভাগ 

 মানব শিশু জন্মের সময় দেহে প্রায় 300 টি অস্থি থাকে। তবে পরিণত মানব কঙ্কালের 206 টি অস্থি নিয়ে গঠিত। অস্থির বিভিন্ন স্থানে কোমলাস্থি (তরুণাস্থি) থাকে। মানুষের কঙ্কালতন্ত্র কে  প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন :
১.অক্ষীয়  কঙ্কাল 
২.উপাঙ্গীয় কঙ্কাল

অক্ষীয় কঙ্কাল 
 কঙ্কালতন্ত্রের যে অংশগুলো দেহের লম্ব অক্ষ বরাবর অবস্থিত এদের অক্ষীয় কঙ্কাল বলে। মোট 80 টি অস্থির সমন্বয়ে অক্ষীয় কঙ্কাল গঠিত। করোটি, মেরুদন্ড ও বক্ষপিঞ্জর দেহের অক্ষীয় কঙ্কাল গঠন করে।

উপাঙ্গীয় কঙ্কাল 
 কঙ্কালতন্ত্রের যে অংশগুলো অক্ষীয় কঙ্কাল এর দুপাশে প্রতি সমভাবে অবস্থান করে তাদের উপাঙ্গীয় কঙ্কাল বলে 126 টি অস্থির  সমন্বয়ে উপাঙ্গীয় কঙ্কাল গঠিত। বক্ষ অস্থিচক্র,  শ্রেণিচক্র ও নিম্নবাহুর অস্থি  কঙ্কাল গঠন করে।

মোট ২০৬ টি অস্থি নিয়ে গঠিত মানুষের কঙ্কালতন্ত্রের বিভিন্ন অংশকে দেখানো হলো :




0
0

Post a Comment

0 Comments
Post a Comment (0)