প্রখ্যাত ইংরেজ গণিতবিদ জর্জ বুল 1847 সালে তার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ "The mathematical analysis of logic " এ সর্বপ্রথম বুলিয়ান বীজগণিত নিয়ে আলোচনা করেন। পরবর্তীতে 1854 সালের গণিত ও যুক্তির মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে তার "An investigation of the laws of thought " গ্রন্থে বুলিয় বীজগণিত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এতে মূলত সত্য ও মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে আলোচনা করা হয় বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতির আবিষ্কৃত হওয়ার পরেও বীজগণিতের সত্য ও মিথ্যা কে বাইনারি 1 ও 0 দিয়ে পরিবর্তন করার মাধ্যমে কম্পিউটারে অংক কষার সমস্ত গাণিতিক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়।
জর্জ বুল সর্বপ্রথম গনিত ও যুক্তির মধ্যে সম্পর্ক আবিষ্কার করেন এবং গনিত ও যুক্তির উপর ভিত্তি করে এক ধরনের আলজেব্রা তৈরি করেন যাকে বুলিয়ান অ্যালজেবরা বলা হয়। বুলীয় বীজগণিতে যোগ ও গুণ এর মাধ্যমে সমস্ত অংক করার কাজ করা হয়। যোগ ও গুনের ক্ষেত্রে বুলিয়ান অ্যালজেবরা কতগুলো নিয়ম মেনে চলে এর নিয়মগুলোকে বুলিয়ান স্বতঃসিদ্ধ বলা হয়।
বুলিয়ান অ্যালজেবরার মূল কথা
সাধারণ বীজগণিতে চলক বা ভেরিয়েবলের বিভিন্ন মান হতে পারে। কিন্তু বলিয় বীজগণিতে একটি চলক চলক এর মাত্র দুটি মান সত্য (1) অথবা মিথ্যা (0) হতে পারে।
0 (0 volt থেকে 0.8 volt)
1 (2 volt থেকে 5 volt)
কম্পিউটারের ইলেকট্রনিক সার্কিট গুলো 0 এবং 1 এই দুই মানের মাঝামাঝি কোন মান ধারণ করে না।
★ বুলিয়ান বীজগণিত এ তিনটি মৌলিক ক্রিয়া আছে যথা :-
১. বুলিয়ান যোগের ক্রিয়া (OR operation)
২.বুলিয়ান গুনের ক্রীয়া (AND operation)
৩. বুলিয়ান পূরকের ক্রীয়া (NOT operation)
★ বুলিয়ে বীজগণিতীয় ভগ্নাংশ, ঋণাত্মক সংখ্যা, বর্গ ইত্যাদির ব্যবহার নেই।
১. OR কে ∨ চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
২. AND কে ⋀ চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
3. NOT কে 〜 চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
দ্বৈত নীতি
বুলিয়ান অ্যালজেবরা ব্যবহৃত সকল উপপাদ্য যে দুটি নিয়ম মেনে একটি বৈধ সমীকরণ থেকে অপর একটি বৈধ সমীকরণ নির্ণয় করা যায় তাকে বুলিয়ান দ্বৈতনীতি বলে। বুলিয়ান আলজেবরায় OR এবং AND এর সাথে সম্পর্কযুক্ত সকল উপপাদ্য দ্বৈত নীতি মেনে চলে। AND এবং OR অপারেশন সাথে সম্পর্কযুক্ত সকল উপপাদ্য দ্বৈত নিয়ম মেনে চলে।
AND (.) ও OR (+) পরষ্পর বিনিময় করে। যেমন:-
1 + 1 = 1
1. 1 = 1
1 ও 0 কে পরষ্পর বিনিময় করে,
0 + 1 = 1
1 + 0 = 1
এবং
1. 0 = 0
0. 1 = 0
বুলিয়ান উপপাদ্য
মৌলিক উপপাদ্য
A + 0 = A
A + 1 = 1
A + A= A
A + A' = A
A.A = A
A.0 = 0
A.1 = A
A.A' = 0
বিনিময় উপপাদ্য
A + B = B + A
A.B = B.A
অনুষঙ্গ উপপাদ্য
A + ( B +C ) = ( A + B ) + C
A.(B.C) = (A.B).C
সহায়ক উপপাদ্য
A + A.B = A
A" = A
বিভাজন উপপাদ্য
A ( B + C ) = A.B + A.C
A + B.C = (A+B)(A+C)
A + A'B = A+B
A.B + B'.C + BC = A.B + C
ডি - মরগ্যানের উপপাদ্য
( A + B ) ' = A'. B'
(A.B)' = A' + B'
সত্যক সারনি বা Truth table
যে সারণির মাধ্যমে বুলিয় বীজগণিতের বিভিন্ন ইনপুটের মানগুলোর সম্ভাব্য আউটপুট মান দেখানো যায় তাকে সত্যক সারনি বলে।
নিয়ম:-
১. সমীকরণে দেখতে হবে কয়টি চলক আছে।
২. সারনিতে একাধিক ইনপুট থাকতে পারে সেজন্য n = চলক সংখ্যা হলে। সারি সংখ্যা হবে 2^n সংখ্যাক।
৩. সর্বশেষ চলকটির মান 0 আর 1 ধরে কলাম পূর্ণ করতে হবে।
৪. এবং প্রয়োজনীয় গাণিতিক সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে সারনি তৈরি করতে হবে।
নিচে কতগুলো উদাহরণ দেয়া হল :
-
সত্যক সারণি ব্যবহার:-
১. সত্যক সারণীর মাধ্যমে সার্কিট এর আউটপুট কি হবে তা ঠিক করা হয় এবং সেখান থেকে বুলিয়ান রাশি বের করা হয় এবং ইলেকট্রনিক্স সার্কিট তৈরি করা হয়।
২.বুলিয়ান উপপাদ্য প্রমাণ করার জন্য সত্যক সারণি ব্যবহার করা হয় ।
৩.একটি বুলিয়ান রাশির সরলীকরণ করে নতুন একটি রাশিতে রূপান্তর করা যায় ।
৪.সরলীকরণ সঠিক কিনা পরীক্ষার জন্য সত্যক ব্যবহার করা হয়।
লজিক ফাংশন সরলীকরণ
লজিক্যাল ফাংশন গুলো লজিক গেটের মাধ্যমে কার্যকর করা হয়। তাই লজিক্যাল ফাংশন গুলো সরল হলে বাস্তবে লজিক গেটের ব্যবহার সহজতর হয়। বুলিয়ান সূত্রের সাহায্যে জটিল লজিক্যাল এক্সপ্রেশন বা যুক্তি রাশিমালাকে সরলীকরণ করা যায়। বুলিয়ান রাশিমালাকে সরলীকরণের ফলে সংশ্লিষ্ট লজিক গেটের সংখ্যা কম হয়, ফলে সময় এবং খরচ কমে।
বুলিয়ান অ্যালজেবরার সাহায্যে লজিক ফাংশন সরলীকরণ
বুলিয়ান উপপাদ্যের সাহায্যে লজিক ফাংশন সরলীকরণ ক্ষেত্রেও কতগুলো নিয়ম মেনে চলা হয়। নিয়ম গুলো হল :
1.সরলীকরণ বাম থেকে ডান দিকে শুরু করতে হয়।
2. প্রথম বন্ধনীর ভেতরের কাজ আগে করতে হয়।
3. পূরক NOT (') অপারেশন থাকলে তার কাজ আগে করতে হয়।
4. তারপর AND (.)অপারেশন এর কাজ করতে হয়।
5. এরপর OR(+) অপারেশন এর কাজ করতে হয়।
নিচে কিছু উদাহরণ দেয়া হলো :-
0
0
0
অনেক সহজ ছিল নিয়ম গুলো
ReplyDeleteধন্যবাদ