যে ধরনের অস্থিভঙ্গে অস্থি চামরা থেকে বের হয়ে না থাকে সাধারণ হাড়ভাঙ্গা বলে। হাড় ভেঙে বাইরে বেরিয়ে আসে না বলে এ ভাঙ্গাকে বদ্ধ অস্থিভঙ্গ বলে।
সাধারণ অস্থিভঙ্গের লক্ষণ
১.আঘাতপ্রাপ্ত স্থান সঙ্গে সঙ্গে ফুলে যায়।
২. রক্ত জমে কালশিরা পরে।
৩. আঘাতপ্রাপ্ত অঙ্গ নাড়াচাড়া করতে ব্যথা লাগে
এবং ভেতরে সুচ ফোটার মত ব্যথা অনুভূত হয়।
৪. প্রচণ্ড ব্যথা হয়।
৫. সামান্য ভারী কোনো জিনিস তুলতে পারেনা।
৬.হাত-পা অসার হয়।
৭.হাত-পা ও অস্থি সন্ধির আকার পরিবর্তন হয়।
প্রাথমিক চিকিৎসা
অস্থিভঙ্গের কারণে দেহ কষ্ট যেন না বাড়ে সে জন্য দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা প্রয়োজন। এ চিকিৎসা সম্বন্ধে অজ্ঞ কোন ব্যক্তি যেন আঘাতপ্রাপ্ত জায়গায় হাত না দেয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে এবং দ্রুত যে পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে হবে তা হচ্ছে:
১. অস্থিভঙ্গের মাত্রা ও সঠিক স্থান চিহ্নিত করতে হবে।
২. আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তির নড়াচড়া বন্ধ রাখতে হবে।
৩.সমস্ত ক্ষত পরিষ্কার করতে হবে।
৪.রক্ত সঞ্চালনে বাধা হতে পারে এমন টাইট জামা কাপড়, গয়নাগাটি সরিয়ে ফেলতে হবে তা না হলে ভাঙ্গা হাড়ে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে।
৫. ভাঙ্গা হাড় এর জায়গায় রক্ত সঞ্চালন ও সংবেদন পরীক্ষা করতে হবে।
ত
৬. ভাঙ্গা হাড় যথাস্থানে বসানোর জন্য তার সঙ্গে কাঠের খন্ড বা বাশের চটি বেঁধে দিতে হবে।
৭.রক্তপ্রবাহ ও সঞ্চালন পুনর্বার পরীক্ষা করতে হবে।
৮. ভাঙ্গা হাড়ের জায়গাটি যেন ফুলে না যায় সে জন্য আঘাত পাওয়া জায়গা 6 থেকে 10 ইঞ্চি উঁচুতে রাখতে হবে।
৯. অস্থিভঙ্গের জায়গায় বরফ দেওয়া যেতে পারে তবে দেখতে হবে জায়গাটি যেন ঠান্ডায় অসাড় হয়ে না যায়।
১০."হঠাৎ ও মারাত্মক আঘাত পেয়েছে" আহত ব্যক্তি জন্য এমনটি মনে না করে সেজন্য তাকে চাঙ্গা রাখতে হবে এবং মাথা ঘাড় ও শরীরের বিভিন্ন অংশ সাবধানের নড়াচড়া করতে হবে।
১১. মানসিক আঘাতে কাহিল না হলে রোগীকে ব্যথানাশক ওষুধ দিতে হবে দ্রুত আঘাত স্থল থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।
পরবর্তী ধাপ হচ্ছে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসক প্লাষ্টার লাগিয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবস্থা ও চিকিৎসা পত্র লিখে দেবেন। দেখা যায়, সাধারণত অস্থিভঙ্গ ৮ সপ্তাহের মধ্যেই সেরে যায়।
যৌগিক হাড়ভাঙ্গা
যৌগিক হাড়ভাঙ্গা উন্মুক্ত হাড়ভাঙ্গা নামেও পরিচিত। সাধারণত খেলাধুলার সময় কিংবা সড়ক দুর্ঘটনায় এ ধরনের হাড়ভাঙ্গা ঘটে। তখন হারে টুকরা চামড়া ভেতরে বেরিয়ে আসে এটি বেশ জটিল হাড় ভাঙ্গার কারণ এতে প্রচুর পরিমাণ রক্তপাত হয় এবং দ্রুত সংক্রমণ ঘটে। যৌগিক হাড়ভাঙার ক্ষেত্রেও সাধারণ হাড় ভাঙ্গার মত প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে, তবে ক্ষণকালীন সময়ের জন্য কারন এ হাড় ভাঙ্গা এত গুরুতর যে অপারেশন ছাড়া বিকল্প নেই।
যৌগিক হারভাঙ্গার প্রকারভেদ
হাড় ভাঙ্গার প্রকৃতির ভিত্তিতে যৌগিক হাড়ভাঙ্গা কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়:-
ধরন-১: ক্ষতের পরিমাণ কম, চামড়ায় 1 সেন্টিমিটার এর চেয়ে বেশি ক্ষত দেখা যায় না এবং রক্তপাতও কম হয়।
ধরন-২: ক্ষতের পরিমাণ বেশি, চামড়ায় 1সেন্টিমিটারের বেশি ক্ষতি দেখা যায় না এবং চামড়ার তেমন ক্ষতি হয় না।
ধরন-৩: এক্ষেত্রে চামড়া,টিস্যু ও হাড়ের মারাত্মক ক্ষতি হয়। রক্তপাত, সংক্রমন এড়াতে দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হয়।
যৌগিক ভাঙ্গার লক্ষণ
হাড় ভেঙে টিস্যু ও চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে আসা প্রচুর রক্তপাত ও যন্ত্রণাময় ক্ষত সৃষ্টি হওয়ার লক্ষণ।
জটিল হাড়ভাঙ্গা
জটিল হাড় ভাঙ্গার ফলে বেশ কয়েকটি হার অস্থিসন্ধির টেনডন ও লিগামেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যৌগিক হাড় ভাঙার মতো এক্ষেত্রে হাড়ের টুকরা চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে থাকে অনেকে নানা ধরনের ভাগে ভাগ করা যায় এর মধ্যে প্রধান দুটি হচ্ছে :-
১.বহুটুকরাবিশিষ্ট : এক্ষেত্রে হাড় গুলো অনেক ছোট টুকরা পরিণত হয়।
২.কয়েক টুকরা বিশিষ্ট: এ ধরনের হাড় ভাঙ্গা টুকরোগুলো আগের চেয়ে সামান্য ধরনের এবং সংখ্যায় কম থাকে।
জটিল হাড় ভাঙ্গার লক্ষণ প্রকাশ পেলে চিকিৎসক দ্রুত অপারেশনের ব্যবস্থা নেবেন। তবে তার আগে X ray রিপোর্ট দেখে নিতে হয়।
0
0
0