আলোর অপবর্তন । Diffraction

Cyral Carbon
4



সূর্য রশ্মির সাথে লম্বভাবে একটি অস্বচ্ছ বৃওাকার চাকতি স্থাপন করা হলে বিপরীত পাশে পর্দায় চাকতির অনুরূপ একটি ছায়া পড়বে। ঠিক একইভাবে বৃত্তকার ছিদ্র বা চিরযুক্ত একটি অস্বচ্ছ পর্দায় সূর্যের আলো আপতিত হলে ওই ছিদ্র বা চিরের মধ্য দিয়ে সমান্তরালভাবে আলো গমন করবে এবং এর পেছনে রাখা অপর একটি পর্দায় অনুরুপ একটি অংশ আলোকিত হবে।

আলোর সরলরৈখিক গতির জন্য এরূপ ঘটে। নিউটনের আলোর কণাতত্ত্ব সাহায্যে এর ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। কিন্তু বৃত্তকার চাকতির পুরত্ব কম বা প্রান্ত তীক্ষ্ণ( আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সাথে তুলনীয় হলে) আলো সরলরৈখিক গতির জন্য যতটুকু স্থান বা অঞ্চলজুড়ে ছায়া সৃষ্টি হওয়ার কথা,তা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে তার মধ্যে আলোর অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। এ কারণে ছায়ার প্রান্ত তীক্ষ্ণ না হয় না অর্থাৎ ছায়ার কোন সুনির্দিষ্ট সীমারেখা থাকে না।


আলো প্রতিবন্ধকের তীক্ষ্ণ ধার ঘেঁষে বা সূক্ষ্ম ছিদ্র বা চিরের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় আলো কিছুটা বেকে ছায়া অঞ্চলের মধ্যে প্রবেশ করে। এ ঘটনাকে আলোর অপবর্তন বলে। নিউটনের কনা তত্ত্বের সাহায্যে এর ব্যাখ্যা দেওয়া যায়না,তরঙ্গ তত্ত্বের সাহায্যে দেয়া যায়।প্রতিবন্ধকের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সব ধরনের তরঙ্গই বেকে যায়।

ইয়ংয়ের দ্বি-চির পরীক্ষায় প্রতিটি চির এক একটি উৎস হিসেবে কাজ করে আলোর অপবর্তনের জন্য।আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য খুব ছোট হওয়ায় বৃহৎ বস্তুর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এই বেঁকে যাওয়া তেমন একটা বুঝা যায় না।


হাইগেনের নীতির সাহয্যে অপবর্তন এর একটি ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। ধরা যাক,
একটি ক্ষুদ্র আলোক উৎস S এর সামনে AB একটি কম পুরত্বের অসচ্ছ প্রতিবন্ধক এবং এর পেছনে PQ একটি পর্দা। আলো সরল রেখায় গমন করে বলে পর্দার উপর AB এর ছায়া MN গঠিত হবে এবং M এর উপরে ও N এর নিচে পর্দার সব অংশ সমভাবে আলোকিত হবে।কিন্তু ভালোভাবে লক্ষ করলে দেখা যাবে,ঠিক M বিন্দু বা N বিন্দু থেকে গাঢ় ছায়া অংশ শুরু হয় না। অর্থাৎ ছায়ার দুই প্রান্ত খুব তীক্ষ্ণ নয়।
M বিন্দুর নিচে MM' অংশে এবং N বিন্দুর উপরে NN' অংশে ছায়ার মধ্যেও কিছু আলোর অনুপ্রবেশ ঘটে। তবে এ অংশে আলোর তীব্রতা ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকে এবং M' ও N' বিন্দুতে শুন্য হয়।এটি আালোর অপবর্তন।
উৎস S থেকে নির্গত গোলীয় তরঙ্গমুখ যখন AB বরাবর পৌছাবে, হাইগেনের নীতি অনুসারে, তখন A ও B বিন্দু থেকে যে গৌন তরঙ্গ সৃষ্টি হয় তার কিছু অংশ ছায়া অঞ্চলের মধ্যে অর্থাৎ MM' ও NN' অংশে প্রবেশ করে।

★ অপবর্তনের শর্ত,

১. আলোর অপবর্তন সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকের ধার বা কিনারা খুব তীক্ষ্ণ হতে হবে।
২.চিঁড়ের প্রস্থ বা ছিদ্রের ব্যাস খুব ছোট হতে হবে। এগুলো আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের সাথে তুলনীয় হতে হবে।

★ আলোর অপবর্তনকে দুটি সুবিধাজনক শ্রেণীতে ভাগ করা যায় :

১. ফ্রেনেল শ্রেণীর অপবর্তন

যেসব ক্ষেত্রে অপবর্তন সৃষ্টিকারী প্রতিবন্ধক বা চির থেকে উৎস বা পর্দা সসীম দূরত্বে অবস্থান করে সেসব অপবর্তনকে ফ্রেনের শ্রেণীর অপবর্তন বলে। উৎস সসীম দূরত্ব হওয়ার অর্থ হল- তা থেকে নির্গত তরঙ্গের তরঙ্গমুখ গোলীয়। সুতরাং প্রতিবন্ধক বা চিরের উপর আলোক তরঙ্গ আপতিত হলে এ শ্রেণির অপবর্তন অপবর্তন পাওয়া যায়। সুচ,সরু তার বা সরু চিরের ওপর আলোক তরঙ্গ আপতিত হলে এ শ্রেণীর অপবর্তন পাওয়া যায়। এ শ্রেণীর অপবর্তন এ কোন লেন্স ব্যবহার করা হয় না।

২. ফ্রনহফার অপবর্তন

যেসব ক্ষেত্রে অপবর্তন সৃষ্টিকারী প্রতিবন্ধক বা চির থেকে উৎস ও পর্দা উভয়ই অসীম দূরত্বে অবস্থান করে, সেসব অপবর্তনকে ফ্রনহফার  শ্রেণীর অপবর্তন বলে। উৎস  অসীম দূরত্বে অবস্থিত হলে তা থেকে নির্গত রশ্মি সমান্তরাল হয় এবং সেসব ক্ষেত্রে তরঙ্গমুখ সমতল  হয়। সুতরাং প্রতিবন্ধক বা চিরের উপর সমতল তরঙ্গমুখ আপতিত হয়ে যে  অপবর্তন সৃষ্টি করে তাই ফ্রনহফার  শ্রেণীর অপবর্তন। একক চির, দ্বি-চির  এবং অপবর্তন গ্রেটিং ইত্যাদির  উপর সমতল আলোক তরঙ্গ হলে এ শ্রেণীর অপবর্তন পাওয়া যায়।

 উৎস থেকে নির্গত আলো লেন্সের সাহায্যে সমান্তরাল করে নিয়ে অপবর্তন ঘটানো হয় এবং আপবর্তিত রশ্মিসমুহ  লেন্সের সাহায্যে একত্রিত করে পর্দায় ফেলা হয়। এ  অপবর্তন সহজে সৃষ্টি করা যায় এবং এর বিশ্লেষণ অপেক্ষাকৃত সহজ।
0
0

Post a Comment

4 Comments
  1. অপবর্তন কোনের সর্বোচ্চ মান কত?

    ReplyDelete
    Replies
    1. আলোর অপবর্তনের ক্ষেএে,
      Ө = অপবর্তন কোন
      আমরা জানি,
      d sinӨ = nג

      Ө এর
      এর মান sin এর উপর নির্ভরশীল। যার সর্বোচ্চ মান 90 degree.
      সুতরাং, অপবর্তন কোনের সর্বোচ্চ মান 90 degree.

      Delete
  2. অপবর্তনের দ্বারা আলোর কোন ধর্মকে প্রমাণ করা যায়?
    তরঙ্গ তত্ব/ তীর্যক রুপ??

    ReplyDelete
    Replies
    1. অপবর্তন এর মাধ্যমে আলোর বেকে যাওয়ার রূপটিকে প্রকাশ করা হয়।
      সাধারনত আলো সোজা সরল পথে চলে। কিন্তুু আলোক রশ্মি মূলত দুটি কারণে তীর্যকভাবে বেঁকে যায়,
      ১. অপবর্তনেে কারণে
      ২. উচ্চ মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণে
      আর ডি-ব্রাগলীর সমীকরণ হতে আলোর দ্বৈত প্রকৃতি জানতে পারি,
      ১. কনা ধর্ম
      ২. তরঙ্গ ধর্ম

      Delete
Post a Comment